প্রোটিন ঘাটতির ৮টি লক্ষণ ও উপসর্গ
প্রোটিন ঘাটতির কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে: শরীরে ফোলা ভাব, চুল পড়া, অত্যধিক ক্ষুধা, এবং গুরুতর সংক্রমণের প্রবণতা।
প্রোটিন মানব দেহের মূল নির্মাণ ব্লকগুলোর অন্যতম। এটি পেশী, ত্বক, এনজाइम, এবং হরমোনের গঠন ও কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যখন আপনার প্রোটিন গ্রহণ আপনার দেহের চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয় তখন এটি প্রোটিন ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও পশ্চিমা বিশ্বের মানুষদের মধ্যে প্রকৃত প্রোটিন ঘাটতি খুব সাধারণ নয়, তবে কিছু মানুষ খাদ্য থেকে খুব কম পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করেন। এটি দেহের কার্যক্রমের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে এবং নানা স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিতে পারে। প্রোটিন ঘাটির সবচেয়ে গুরুতর রূপ হল কওশিওর্কর, যা সাধারণত উন্নয়নশীল দেশের শিশুদের মধ্যে ঘটে যেখানে অপুষ্টি এবং অসন্তুলিত খাদ্যের সমস্যা বেশি।
প্রোটিনের ঘাটতির উপসর্গগুলি এমনকি যখন প্রোটিনের ঘাটতি মার্জিনাল থাকে, তখনও শুরু হতে পারে। এই প্রবন্ধে প্রোটিনের নিম্ন গ্রহণ বা ঘাটতির ৮টি উপসর্গ উল্লেখ করা হলো।
১. এডেমা (Edema)
এডেমা হল একটি অবস্থা যাতে ত্বক ফোলা ও ফুলে যায়। এটি কওশিওর্করের একটি ক্লাসিক লক্ষণ। গবেষকরা বলছেন, এটি মানব সিরাম অ্যালবুমিনের কম পরিমাণের কারণে হতে পারে, যা রক্তের তরল অংশে সবচেয়ে প্রচুর পরিমাণে বর্তমান।
অ্যালবুমিনের মূল কাজগুলোর মধ্যে একটি হল অনকোটিক চাপ বজায় রাখা — একটি শক্তি যা তরলকে রক্ত সঞ্চালনে টেনে আনে। এর ফলে, ফ্লুইড টিস্যুগুলিতে অতিরিক্ত জমা হতে দেয় না। মানব সিরাম অ্যালবুমিনের স্তরের হ্রাসের কারণে প্রোটিন ঘাটতি গুরুতর হলে, অনকোটিক চাপ নেমে আসে। এর ফলে, তরল টিস্যুতে জমা হওয়ায় ফোলা ভাব দেখা দেয়। মনে রাখবেন যে এডেমা গুরুতর প্রোটিন ঘাটির লক্ষণ, যা উন্নত দেশগুলিতে দেখা যায় না।
২. ফ্যাটি লিভার (Fatty Liver)
ফ্যাটি লিভার হল কওশিওর্করের আরেকটি লক্ষণ, যেখানে লিভার কোষে চর্বির রোধ হয়। উন্নয়নশীল দেশে প্রোটিন ঘাটতির সাথে ফ্যাটি লিভার রোগের সম্পর্ক রয়েছে। এই অবস্থাটি প্রদাহ, লিভারের ন্যজনিত ক্ষতি এবং সম্ভবত লিভার অকারী ঘটাতে পারে। এর পেছনের কারণ স্পষ্ট নয়, তবে গবেষণা দেখায়, এটি অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম, মাইটোকন্ড্রিয়াস, এবং পেরক্সিসোমাল কোষগুলির পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।
৩. ত্বক, চুল, ও নখের সমস্যা
প্রোটিন ঘাটতি ত্বক, চুল এবং নখের গঠন ও পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনতে পারে, যেগুলি মূলত প্রোটিনের তৈরি। প্রোটিন ঘাটতি চুলের বৃদ্ধি ও গঠনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা চুল পড়ার একটি অবস্থায় পরিণত হয়। বিশেষভাবে শিশুদের মধ্যে কওশিওর্কর দেখা দেয় ফ্লেকি বা ভাঙা ত্বক, রঙ বদলানো ত্বক এবং প্যাচের মাধ্যমে।
৪. পেশী স্বল্পতা
আপনার পেশী মানব দেহের বৃহত্তম প্রোটিনের সোর্স। যখন খাদ্য থেকে প্রোটিনের অভাব ঘটে, তখন শরীর সাধারণত পেশী থেকে প্রোটিন নিয়ে নেয়। এর ফলে, সময়ের সাথে সাথে পেশীর ক্ষয় হতে পারে। এমনকি প্রোটিনের সামান্য অভাবও বিশেষ করে বৃদ্ধদের মধ্যে পেশী ক্ষয় সৃষ্টি করতে পারে।
৫. হাড় ভেঙে যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকি
যদি আপনার প্রোটিনের পরিমাণ ঠিকঠাক না হয়, তবে এটি হাড়কে দুর্বল করে ফেলতে পারে এবং ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা বেশি পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করেছেন, তাঁদের হিপ এবং স্পাইনের অস্থি খনিজ ঘনত্ব ৬% বেশি ছিল।
৬. শিশুদের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত
যদি প্রোটিনের গ্রহণ অপ্রতুল হয়, তবে এটি শিশুদের বৃদ্ধি ধীর করতে পারে বা রোধ করতে পারে। ২০২০ সালে, ১৪৯ মিলিয়নেরও বেশি শিশু বৃদ্ধিতে সমস্যা ভোগ করছে।
৭. সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি
প্রোটিনের ঘাটতি ইমিউন সিস্টেমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ অ্যান্টিবডি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা উচ্চ প্রোটিন ডায়েট গ্রহণ করেছেন, তাঁরা কম আক্রান্ত ছিলেন।
৮. ক্ষুধা ও ক্যালোরির বৃদ্ধি
প্রোটিন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে এবং মোট ক্যালোরি গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রোটিনের অভাব হলে শরীর প্রচেষ্টা করে ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলার জন্য।
আপনার কতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন?
আপনার দৈনিক প্রোটিনের প্রয়োজন আপনার বয়স, শারীরিক কার্যকলাপের স্তর, এবং ফিটনেস লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে। নারীদের জন্য ৪৬ গ্রাম এবং পুরুষদের জন্য ৫২ থেকে ৫৬ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
আপনার শরীরে প্রোটিনের অভাব হলে কি হয়?
যদি আপনার খাদ্য প্রোটিনহীন হয়, তাহলে আপনি ক্লান্তি, চুল পড়া, এডেমা, এবং গুরুতর সংক্রমণের সম্মুখীন হতে পারেন।
প্রোটিনের ঘাটতির ৫টি লক্ষণ কি কি?
প্রোটিন ঘাটতির ৫টি লক্ষণ হলো চুল পড়া, শুষ্ক ত্বক, সংক্রমণ বৃদ্ধি, ক্ষুধা বৃদ্ধি, এবং এডেমা।
প্রোটিনের স্তর কম হলে কি করবেন?
প্রোটিনের স্তর বাড়াতে সেরা উপায় হলো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন চর্বিযুক্ত মাছ, শীর্ণ মাংস, ডিম, মুগ ডাল, নটস, এবং লো ফ্যাট ডেইরি খাবার খাওয়া।
প্রোটিন ঘাটতির প্রধান কারণ কি কি?
প্রোটিন ঘাটতির বিভিন্ন কারণের মধ্যে রয়েছে অপুষ্টি, গর্ভাবস্থা, খাওয়ার ব্যাধি, লিভারের সমস্যা, কিডনি সমস্যা, এবং প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ।
সারসংক্ষেপ
প্রোটিন শরীরে প্রায় সব অংশে বিদ্যমান, যেমন পেশী, ত্বক, চুল, হাড়, এবং রক্তে। যদিও পশ্চিমা সমাজে প্রোটিন ঘাটতি কম দেখা যায়, তবে এটি নানা উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। যদি আপনি মনে করেন যে আপনার প্রোটিনের অভাব রয়েছে, তবে একজন স্বাস্থ্যকর্মী বা নিবন্ধিত পুষ্টিবিদের সাথে আলোচনা করুন। তাঁদের সাহায্যে একটি সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন।